বিদায়ী বছরে আলোচনার শীর্ষে ছিল বাফুফে নির্বাচন

বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ২০২০ সাল খুব একটা সুখকর ছিল না। হতাশার মধ্যে দিয়েই তারা বছরটি কাটিয়েছেন। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে এবং ঘরোয়া ফুটবলে প্রায় সবধরনের কার্যক্রম স্থগিত কিংবা বাতিল হয়েছিল।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ফুটবলাররা মাঠে খেলার খুব একটা সুযোগ পাননি। যে কারণে ঘরে বসেই তারা অলস সময় পার করেছেন। তবে বছরের শেষভাগে ফেডারেশন কাপ দিয়ে শুরু হয় দেশের ফুটবল মৌসুম। এর আগে মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ ও বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ ছিল অন্যতম।

যদিও বছরের শুরুতে ফেডারেশন কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল বসুন্ধরা কিংস। এমনকী পেশাদার ফুটবল লিগও সময় মতো মাঠে গড়িয়েছিল। কিন্তু দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে লিগ বাতিল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ২০০৭ সালে চালু হবার পর করোনার কারণে প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগ বাতিল করা হয়েছে।

তবে সেই দিক থেকে ভাগ্যবান মহিলা ফুটবলাররা। কারণ দীর্ঘদিন পর তারা মহিলা লিগ খেলার সুযোগ লাভ করেছে। করোনার কারণে লিগের প্রথম লেগের খেলা স্থগিত করা হলেও বছরের শেষভাগে এসে সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে লিগটি। উদ্বোধনী আসরে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ইতিহাসে নাম লিখিয়ে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির মধ্যেও নেপালকে নিয়ে ‘মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ’ আয়োজনের কৃতিত্ব দেখায় বাফুফে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ ফুটবল সিরিজের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন।
দুই সিরিজের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ২-০ গোলে পরাজিত করেছির জামাল ভুঁইয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচটি শেষ হয় গোল শূন্য ড্র দিয়ে। এর ফলে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

দোহায় এ বছর করোনার মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব। তবে স্বাগতিক কাতারের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারেনি জেমি ডে’র শিষ্যরা। বাংলাদেশ ০-৫ গোলে হেরে যায়।

এ বছর অবশ্য ফুটবলের চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল বাফুফের নির্বাচন। শুরুতে বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী ও ফুটবল সংগঠক তরফদার রুহুল আমিন সভাপতি পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও পরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এপ্রিল মাসে বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে নির্ধারিত নির্বাচন পিছিয়ে সম্পন্ন হয়েছে অক্টোবরে। যেখানে কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী মো. সালাউদ্দিন চতুর্থবারের মতো সভপাতি নির্বাচিত হন। সিনিয়র সহসভাপতি পদে পুন:নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি। বাসস।

এ বছর ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে দু:খজনক ঘটনা হচ্ছে বাফুফের সাবেক সহসভাপতি সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়ের পরপারে পাড়ি জমানো। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নানামুখী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বাদল রায়। এছাড়া করোনায় নানা সর্তকতার পরও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন সাবেক তারকা ফুটবলার এসএম সালাহউদ্দিন ও নুরুল হক মানিক।

এদিকে করোনার প্রথম ধাপে ক্রিকেটের পর দ্বিতীয় ধাপে ফুটবলেই করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। বিশেষ করে মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ-নেপাল ফুটবল সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগেই করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের ইংলিশ কোচ জেমি ডে। করোনা তাকে বেশ ভূগিয়েছে। টানা পঞ্চমবারের মতো করোনা পরীক্ষা করিয়ে জেমি ডে’র নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। জেমি ডে’র পরপরই জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম মিডফিল্ডার মনজুরুর রহমান মানিক করোনা পজিটিভ হন। ফুটবলে জেমি-মানিকের করোনা আক্রান্তের পর বাফুফে সহসভাপতি ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি মো. ইমরুল হাসানও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

শুধু কী তাই! বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাহউদ্দিনেরও করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছিল। বাসায় থেকেই তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। জাতীয় ফুটবল দলের সাথে কাতার গিয়ে ম্যানেজার আমের খান ও দলের ফিজিও ফুয়াদ হাসান হাওলাদার করোনা থেকে রেহাই পাননি। সেখানে এ দু’জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল পজিটিভ ধরা পড়ে। এমন কী কাতারে খেলতে যাওয়া জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষে যখন দেশে ফিরতে যাচ্ছিলেন তখন সেখানে তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্রাচার্য। এছাড়া ৪ নারী ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্না, রেহানা আক্তার, শামসুন নাহার ও আনাই মোগানি এবং নারী ফুটবল দলের দুই স্টাফ রাবেয়া খাতুন ও মো. আল আমিন করোনা পজিটিভ হয়েছিল। এখন তো ফুটবল অঙ্গনের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

 

Rent for add

সর্বশেষ নিউজ

for rent