সুয়ারেজ ও কাভানি যুগের শেষের পথে উরুগুয়ে

গত প্রায় দেড় দশক ধরে উরুগুয়ের জাতীয় ফুটবল দল মানেই লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানি নির্ভর শক্তিশালী আক্রমণভাগ। কিন্তু অভিজ্ঞ এই দুই তারকার শেষ বিশ্বকাপ যতই এগিয়ে আসছে ততই উরুগুয়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরছে কিভাবে সম্ভাব্য সেরা উপায়ে দলের এই দুই কান্ডারিকে বিদায় জানানো যায়।

দুজনের বয়সের ব্যবধান মাত্র ২১ দিনের। ৩৫ বছর বয়সী এই দুই তারকা ফরোয়ার্ডই ক্যারিয়ারে ইউরোপের বেশ কিছু শীর্ষ ক্লাবে খেলে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন। জাতীয় দলও তাদের উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল। উরুগুয়ে জাতীয় দলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার লড়াইয়ে যেন নিজেরাই ব্যস্ত থাকতো। ১৩৪ ম্যাচে সুয়ারেজ যেখানে করেছেন ৬৮ গোল, সেখানে ১৩৩ ম্যাচে কাভানির কাছ থেকে এসেছে ৫৮ গোল।

১৫ বছরের ক্যারিয়ারে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সুয়ারেজ-কাভানি ঝলকে উরুগুয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিল। এর পরের বছর উরুগুয়ে কোপা আমেরিকা জয় করে। কাতারে খেলার মাধ্যমে এটি তাদের ক্যারিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপ হবে। এই বয়সে এসে সতীর্থদের কাছে এখনো তারা দুজনেই নির্ভরশীলতার নাম। নিজেদের ইগোকে পাশে রেখে সবসময়ই দলকে প্রাধান্য দিয়েছেন, একে অন্যকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করেছে। নতুন একটি প্রজন্মের কাছে এর থেকে ভাল উদাহরন আর কিছুই হতে পারেনা। অবসরের পর শুধুমাত্র উরুগুয়ে নয় পুরো ফুটবল বিশ্বই তাদেরকে দারুণভাবে মিস করবে।

ফুটবল ইতিহাসের উপর বেশ কিছু বইয়ের লেখক বিখ্যাত সাংবাদিক লুইস প্রাটস বলেছেন, ‘এই অ্যাটাকিং জুটি গোলের দিক থেকে এমন কিছু সম্ভাবনা তৈরি করে গেছে যা সেলেস্তারা হয়তো কখনো চিন্তাই করেনি। অন্তত শেষ ৬০ বছরে তাদের ইতিহাস তাই বলে। এমনকি কঠিন ম্যাচগুলোতেও অনায়াসেই তাদের উপর নির্ভর করা যেত। তুমি তাদেরকে শুধুমাত্র বল বানিয়ে দাও, বাকিটা তারা শেষ করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয়। কাভানি সুয়ারেজের অনেক গোলের যোগানদাতা, ঠিক তেমনিভাবে সুয়ারেজও।’

এই মুহূর্তে আইকনির সাবেক কোচ অস্কার তাবারেজ পরবর্তী যুগে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে উরুগুয়ে। দীর্ঘ ১৫ বছর তাবারেজ এককভাবে উরুগুয়েকে পরিচালনা করেছেন। ১৯৯৫ সালের পর কোপা আমেরিকা না জেতা ও ১৯৭০ সালের পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে না খেলা দলটিকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন তাবারেজ। কিন্তু কাভানি বলেছেন এবারের বিশ্বকাপে তাবারেজকে ছাড়া তাদের মধ্যে বাড়তি কোন আবেগ কাজ করছে না, ‘এখানেই ফুটবলের সৌন্দর্য্য। এটি বিশ্বকাপ, এখানে আবেগের কোন স্থান নেই। একবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর অর্থ হলো সবকিছুকে পিছনে ফেলে শুধুমাত্র সামনে এগিয়ে যাওয়া। প্রথম কিংবা পঞ্চম যাই হোক না কেন এখানে কোন পার্থক্য নেই। আমাদের মধ্যে যদি এই বোধ না আসে তবে সমস্যায় পড়তে হবে।’

যদিও এই মুহূর্তে কাভানি কিংবা সুয়ারেজ কেউই তাদের পুরনো দলে নেই। নাপোলি, পিএসজি, ম্যাচেস্টার ইউনাইটেডের কাভানি এখন ভ্যালেন্সিয়ায় খেলছেন। অন্যদিকে আয়াক্স, লিভারপুল, বার্সেলোনা ও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ অধ্যায় শেষ করে পুরো ফুটবল বিশ্বকে অবাক করে বছরের শুরুতে নিজের প্রথম পেশাদার ক্লাব ন্যাসিওনালে ফিরে এসেছে সুয়ারেজ। কিন্তু বরাবরের মতই সুয়ারেজ একইরকম আত্মবিশ্বাসী ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ মনোভাব নিয়েই বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন, ‘আমাদের দলে অভিজ্ঞতা ও তারুন্যেও মিশেল রয়েছে, আমি বিশ্বাস করি উরুগুয়ে একটি চমৎকার বিশ্বকাপ কাটাবে।’

নতুন কোচ দিয়েগো আলোনসোর অধীনে উরুগুয়ে নতুন একটি দল হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। রিয়াল মাদ্রিদের ফেডেরিকো ভালভার্দে, লিভারপুলের ডারউইন নুনেজ, টটেনহ্যামের রডরিগো বেনটানকারকে নিয়ে আশাবাদী হতেই পারে দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। মধ্যমাঠে ভালভার্দে-বেনটানকারকে নিয়ে উরুগুয়ের পরবর্তী প্রজন্ম সামনে এগিয়ে যাবে, এমন আভাস ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে।

Rent for add

সর্বশেষ নিউজ

for rent