দেশে বিশ্বমানের বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু

শীর্ষ স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করছে বিশ্ব মানের ‘বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স’।

একই ভেন্যূতে ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ইভেন্ট আয়োজন করার মত ব্যবস্থা শুধু বাংলাদেশই নয়, এ উপমহাদেশেও নেই।

এবার তেমনই একটি বিশ্ব মানের ক্রীড়া কমপ্লেক্স উপহার দিচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন আঙ্গিকে দীর্ঘদিন ধরে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসা অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। এবার তারা সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গড়ে তুলছে আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার (জমির মুল্যসহ ১৫ হাজার কোটি) প্রকল্পটি গড়ে উঠছে বালু নদীর পাড় ঘেঁষে।

আগামীকাল এ ভেন্যূতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে বসুন্ধরা স্পোর্টস এরেনার। এ বিষয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কিংসের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক, দপ্তর সম্পাদক মাহবুবুর রহমান তুহিন ও বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের প্রজেক্ট ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আমানউল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল বসতির শেষ প্রান্তে অবস্থিত এ কমপ্লেক্স। শুরুতে ৫০ বিঘা দিয়ে শুরু হলেও পুরো প্রকল্প এখন ৩০০ বিঘা জমিতে হবে। ২০১৯ সালে প্রকল্প শুরু হয়ে এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে কমপ্লেক্সের। তবে ১৪ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কিংস অ্যারেনার কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্তমানে গোল পোস্টের পেছনে মিডিয়া ট্রিবিউন, পরে দুই পোস্টের মাঝামাঝি স্থানে বসানো হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
]
ফুটবল ম্যাচ দেখার জন্য টিকিট কিনলে শাটল বাসে বসুন্ধরা গেট থেকে স্টেডিয়ামে নিয়ে আসবে ম্যাচ শেষে আবারও পৌঁছে দিবে। মাঠেরই দুপাশে হবে ১৪ হাজার আসন বিশিষ্ট গ্যালারি। এটাই হবে কিংসের হোম ভেন্যু। উত্তর পাশে কাজ চলছে ক্রিকেট মাঠের। আর দক্ষিণ দিকে হবে ৫০০ ক্রীড়াবিদের জন্য আবাসন, আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হকি ফিল্ড, আরচারি রেঞ্জ, শুটিং রেঞ্জ, ইনডোর গেমস এবং একটি গলফ কোর্সসহ আরও অনেক খেলার অবকাঠামো।

এবার এএফসি কাপ এখানে হবে না, এবার সিলেটের জন্য আমরা বিট করেছি। ইনশাল্লাহ আগামী মৌসুমে এখানে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। কোভিডের বিধি নিষেধের কারণে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমন্ত্রিত লোকেরাই সুযোগ পাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ইমরুল হাসান জানান, যেহেতু বসুন্ধরা কিংস একটা পেশাদার ক্লাব, তাদের জন্য একটি ফুটবল মাঠের চিন্তা থেকেই আসলে গত বছর জুনে আমরা মাঠ প্রস্তুতির কাজ শুরু করি। এ ছাড়া যেহেতু ক্রিকেটের সঙ্গেও আমাদের সম্পৃক্ততা আছে।

ভবিষ্যতে আমরা ক্রিকেট দল নিয়েও আসতে চাই। আমরা ৫৫ বিঘার ওপরে কাজ শুরু করি। তখন আসলে আমরা ফুটবলের বড় স্টেডিয়ামের কথা ভাবিনি। একটা প্র্যাকটিস ফিল্ড করার ইচ্ছা ছিল। পরবর্তী সময়ে মনে হলো এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম করে ফেললে এটাই হবে কিংসের হোম ভেন্যু, সেক্ষেত্রে হোম ভেন্যুর জন্য আমাদের বাইরে যেতে হবে না। তাই আমরা গ্যালারি করার চিন্তা করি। গ্যালারি করার ব্যাপারটি নিয়ে বসার পর ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।
দেশের প্রচলিত প্রায় সব খেলাই এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে । আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের গর্ব করার মতো বেশি কিছু নেই। আশা করি এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে তুলে ধরব। আগামী বছর কিংসের নামে আমরা একটা ক্রিকেট দলও করব। আসলে পেশাদার লিগের প্রথম শর্ত হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচ হয়ে থাকে। সুতারাং হোম ম্যাচে হোম টিম সুবিধা পাবে। শেষ পর্যন্ত বাফুফে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের শুরুতে যে ভুলটুকু ছিল তা শুধরে নিয়েছে। আপাতত সাত হাজার, সব মিলিয়ে ১৪ হাজার আসন রাখা হয়েছে। আসন সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগও রাখা হয়েছে। যদি হয় বাড়াতে হবে, তখন বাড়ানো হবে। মেয়েদের জন্যও হবে ডেডিকেটেড স্টেডিয়াম’।

দু’টি জোনে বিভক্ত করে বসুন্ধরা গড়ে তুলছে এই স্বপ্নের প্রকল্প। উত্তর জোনের প্রায় সত্তরভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দক্ষিণ জোনেও ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। পুরো কমপ্লেক্সের পশ্চিম দিক দিয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি লেক। যা সংযুক্ত হবে বালু নদীর সঙ্গে। দক্ষিণ জোনে নির্মাণ করা হবে ১৫ হাজার আসন বিশিষ্ট আধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ক্রিকেট প্র্যাকটিস ফিল্ড, ক্রিকেট নেট, ফুটবল প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড, হকি ফিল্ড, টেনিস কোর্ট, বাস্কেটবল, ভলিবল, কারাতে কোর্ট, ফুটসাল কোর্ট, অ্যাকাডেমি ও ক্লাব ভবন, ক্যাফেটারিয়া, শুটিং রেঞ্জ, কারাতে, তায়কোয়ান্দো, জুডো, ইয়োগার মতো খেলার জন্য একটি মাল্টি-পারপাস স্টুডিও, ইনডোর গেমস রুম, ট্রেনিং রুম, ডরমেটরি, গলফ ড্রাইভিং রেঞ্জ, আরচারি রেঞ্জ এবং একটি ল্যান্ডস্কেপ পার্ক।

ইমরুল বলেন, ‘দক্ষিণ জোনে আমরা সবুজায়নে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। পার্ক থাকছে, যাতে করে গোটা দিন কেউ এখানে এসে কাটাতে পারেন।

উত্তর জোনে ফুটবল স্টেডিয়াম, ২৫ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ইনডোর কমপ্লেক্স, ২৫ ও ৫০ মিটার সুইমিং পুল, স্কোয়াশ কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, জিমন্যাসিয়াম এবং একটি স্পোর্টস মিউজিয়াম। কমপ্লেক্সের ধার ঘেঁষেই দুই বিঘা জমির ওপর স্থাপন করা হবে বিশাল মসজিদ এবং একটি আধুনিক শপিং সেন্টার।

শপিং সেন্টারে ফুটকোর্ট, সিনেপ্লেক্স থেকে শুরু করে সবকিছুই থাকবে বলেও জানান কিংস সভাপতি।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ইতোমধ্যেই সমাদৃত হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ফুটবলে কেবল নিজেদের নয়, তারা আর্থিক পৃষ্ঠপোষণা দিচ্ছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র এবং শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবকে। ক্রিকেটে তারা বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্সের মালিক। এর বাইরে গলফ, কাবাডি, হকিসহ বিভিন্ন খেলায় নিয়মিতই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তারা।

এবার নয়নাভিরাম ও বিশ্বমানের একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথ দেখাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

Rent for add

সর্বশেষ নিউজ

for rent