‘আমি এই কোচকে নিয়ে সন্তুষ্ট নই’

দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা কাজী মো. সালাউদ্দিন চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একাধারে তিনি সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতি হিসেবে আছেন তৃতীয় মেয়াদে।

চতুর্থবারের মতো বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশের ফুটবল নিয়ে কী পরিকল্পনা সাজিয়েছেন দেশের প্রথম পেশাদার এই ফুটবলার, এ নিয়ে তিনি একান্ত ও বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম ফুটবল বিষয়ক নিউজপোর্টাল ‘ফুটবল বাংলাদেশ ডটকম’কে। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে অকপটে অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন কাজী সালাউদ্দিন।

প্রথম পর্বে ছিল বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ পরিকল্পনার কথা। এ জন্য তার টাকার প্রয়োজন। যেটার জন্য ক্রীড়াবন্ধব প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাবেন বলে জানিয়েছেন বাফুফে সভাপতি। দ্বিতীয় পর্বে জানাচ্ছেন জাতীয় দল নিয়ে তার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা। সেখানে উঠে এসেছে বর্তমান কোচ জেমি ডে’র কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা কথাও।

আজ পড়ুন দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…

পবিত্র কুন্ডু: নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যথাসাধ্য ভালো বিদেশি কোচিং স্টাফ আনা হচ্ছে, প্রস্তুতির ভালো সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় দল কি যথেষ্ট ভালো করছে? তিনবছর কাজ করছেন জেমি ডে। এই ইংলিশ কোচ ও কোচিং স্টাফ নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?

সালাউদ্দিন: না, জাতীয় দল প্রত্যাশিত ফল করতে পারছে না। আমি এই কোচকে নিয়ে সন্তুষ্ট নই। তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে তাকে। যথেষ্ট সময়। নেপালে আমরা সম্প্রতি হেরে এলাম কোচের কারণে। তার সঙ্গে আলোচনায় বসে তাকে এটা আমি জানিয়েও দিয়েছি। বলেছি, আমিও একটু-আধটু ফুটবল বুঝি, আমি অশিক্ষিতও নই।

পবিত্র: তাহলে কি ধরে নিতে পারি খুব শিগগিরই জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ বদলাচ্ছে?

সালাউদ্দিন: সেটি আমি নীতিগতভাবে বলতে পারি না। তবে এটা বলতে পারি, আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের বাকি তিনটি ম্যাচে আমরা তার পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করব।

পবিত্র: জাতীয় দলের খেলোয়াড় নির্বাচন ও সেরা একাদশ নির্বাচনে একটা সিন্ডিকেট কাজ করে, এমনটা গুঞ্জরিত হয় এখন সবখানে। এ নিয়ে আপনি কী বলবেন?

সালাউদ্দিন: না, না এটা ঠিক নয়। খেলোয়াড় নির্বাচন কোচই করেন। যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের যে আমি খুব পছন্দ করি তা নয়। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত চালিয়েছি। কোচ,ট্রেনার,টেকনিক্যাল ডিরেক্টর…, এরকম সাত-আটজনের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলেছি। দল নির্বাচনে বা খেলোয়াড় নির্বাচনে ওরকম হস্তক্ষেপ দেখিনি।

পবিত্র: আপনি একবার বলেছিলেন শেখ কামাল বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ এতদিন বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে ফেলতেও পারত। আপনি কি সত্যিই এই বিশ্বাস নিয়ে চলেন?

সালাউদ্দিন: অবশ্যই,এটা আমি মন থেকে বিশ্বাস করি। কামালের যে ভিশন, যে ডেডিকেশন ছিল তা অতুলনীয়। কামালকে হারানো দেশের ফুটবলের জন্য বিরাট ক্ষতি।

পবিত্র: দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে আপনি ভিশন ২০২২ ঘোষণা করেছিলেন। অর্থাৎ কাতার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার রূপকল্প দিয়েছিলেন। তা নিয়ে অবশ্য অনেকে হাসাহাসি করেছে, আপনার সমালোচনা হয়েছে। ওটা তো আর কাজ করল না। এখন নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন?

সালাউদ্দিন: হ্যাঁ, আমি ভিশন ২০২২ ঘোষণা করেছিলাম। আমার ব্যাপারে এ নিয়ে হাসাহাসি করতে হবে, কথা বলতে হবে, আমি জানতাম। কিন্তু ঘটনা হলো আপনি যদি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে না এগোন কিছুই করতে পারবেন না। একটা লক্ষ্য আপনার থাকতেই হবে। তাছাড়া আমি তো বলিনি ২০২২ বিশ্বকাপে আমরা খেলবই। আমি কাতার বিশ্বকাপের জন্য একটা রূপরেখা দিয়েছিলাম।

এখন আমি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করতে চাই। চার বছর পরে হোক বা ছয় বছর পরে, এশিয়ান কাপে খেলতে চাই আমরা। এ জন্য অবশ্য ক্লাবগুলোর সহযোগিতা লাগবে, সব পার্টনারের সাহায্য লাগবে। আমি বসুন্ধরা, সাইফ স্পোর্টিংয়ের মতো আরো কর্পোরেট ক্লাব চাই। সেজন্য বসুন্ধরা, সাইফ, আবাহনী প্রতিটি ক্লাবকেই সাপোর্ট দিয়ে যাব।

পবিত্র: আবাহনী-মোহামেডান প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনন্য উন্মাদনা এখন আর নেই। আপনার খারাপ লাগে নিশ্চয়ই। আর স্বীকারও করবেন যে আবাহনী-মোহামেডান প্রতিদ্বন্দ্বিতা মরে যাওয়াতে দেশের ফুটবলের ক্ষতিই হয়েছে?

সালাউদ্দিন: অবশ্যই আমি স্বীকার করি যে এতে ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এই ব্যর্থতা ক্লাব ম্যানেজমেন্টের। কোনোভাবেই ফেডারেশনের দায় এতে নেই। এই উন্মাদনা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট দুটি ক্লাব।

পবিত্র: আবাহনী তাও ভালোই আছে, যদিও ইদানীং তারাও কেমন পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু মোহামেডানের তো লম্বা খরা চলছে।

সালাউদ্দিন: আমি আবাহনী নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে মোহামেডানে নতুন কমিটি আসায় ক্লাবটিতে বেশ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ফুটবল কমিটির নতুন চেয়ারম্যান আলমগীর সাহেব আমাকে বলেছেন, মোহামেডান নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। সেটা হলে দেশের ফুটবলের জন্যই ভালো হবে।

পবিত্র: বাংলাদেশের ফুটবলে রেফারিং সবসময়ই খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাঝখানে কিছুদিন তেমন বিতর্ক হয়নি, আবার রেফারিং নিয়ে বিতর্ক উঠছে। আপনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন ‘ভিএআর’ চালু করবেন। সেটার অগ্রগতি কতটা?

সালাউদ্দিন: আমি ভিএআর নিয়ে ফিফা-এএফসির কাছে চিঠি লিখে বলেছি যে আমাকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দাও, ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দাও। ভিএআরের জন্য অবশ্য অনেক টাকা লাগবে। তবুও আমি এটি চালু করার পক্ষে।

পবিত্র: লিগে আবার পাতানো খেলা নিয়ে গুঞ্জন উঠছে। এটা নিয়ে কিছু করছেন?
সালাউদ্দিন: না, না বাফুফের কমিশনড লিগে পাতানো খেলা হচ্ছে না। বেটিং নিয়ে কয়েকটি কেস ধরেছে এএফসি। সেটি নিয়ে কাজ করে চলেছি আমরা। বাফুফে পাতানো খেলার ব্যাপারে খুব সজাগ। কোনো ধরনের বেটিং-ফিক্সিং এখানে চলবে না।

পবিত্র: আপনার বাফুফের কমিটি কেমন হয়েছে?
সালাউদ্দিন: একটাই কথা বলব। সবাইকে নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। বোর্ড খারাপ নয়, ভালো হয়েছে।

Rent for add

সর্বশেষ নিউজ

for rent